প্রেম কাহিনী-পাঠ-৬

 
করতে করতে পড়াশােনা করতে পারলেও ভালাে রেজাল্ট করতে পারবে না। তারচেয়ে এক কাজ কর, ও আমাদের আরজু হয়ে আমাদের কাছে থেকে লেখাপড়া করুক। সাইফুল সাহেবের স্ত্রীর কথা শুনে অবাক হয়ে ওনাদের দিকে তাকিয়ে দেখল, দু’জনেরই চোখে পানি। জিজ্ঞেস করল, আরজু কে? জালাল সাহেব চোখ মুছে বললেন, আরজু আমাদের একমাত্র সন্তান ছিল। তাকে আল্লাহ উঠিয়ে নিয়েছেন। তারপর স্ত্রীকে দেখিয়ে বললেন, সেই থেকে অসুস্থ হয়ে গেছে। শুনে সাইফুলের মনে দুঃখ হল। সেই সঙ্গে ফকিরের কথা তার মনে পড়ল। আল্লাহকে স্মরণ করে সে উঠে এসে প্রথমে জালালসাহেবকে এবং পরে তাহেরা। বেগমকে কদমবুছি করে বলল আমাকে আপনারা আপনাদের ছেলে মনে করবেন। তাহেরা বেগম তার মাথায় চুমাে খেয়ে চোখের পানি ফেলতে ফেলতে বললেন, হ্যা, তাই মনে করব বাবা। সে জন্যে বােধ হয় আল্লাহ তােমাকে আমাদের কাছে এনে দিয়েছেন। আমরা তােমাকে আরজু বলে ডাকব। সেই থেকে সাইফুল আরজু হয়ে তাদের কাছে থেকে লেখাপড়া করতে লাগল। সে নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামায ও প্রতিদিন ভােরে কুরআন তেলাওয়াত করে। তাই দেখে জালাল সাহেব ও তাহেরা বেগম নামায পড়ছেন এবং কুরআন। তেলাওয়াত করেন। ওনারা সাইফুলকে পেয়ে নিজেদের ছেলের কথা ভুলে গেলেন। তাকে আরজু নামে ডাকেন। সাইফুল ও ওনাদের স্নেহ বালবাসায় মুগ্ধ হয়ে ওনাদেরকে আব্বা ও আম্মা বলে ডাকে। পরের বছর মনিরার স্বামী সাপের কামড়ে মারা গেল। স্বামী মারা যাওয়ার পর মনিরা দিশেহারা হয়ে পড়ল। কোনাে পুরুষ বলতে ঘরে রইল না। শুধু নাজনীনকে নিয়ে বাস করা মুসকীল হল। মনিরা দেখতে সুন্দরী। এখনাে অটুট স্বাস্থ্য। তার ওপর তার স্বামীর জমিজায়গা বেশি না হলেও নেহাৎ কম না। গ্রামের ছেলে-বুড়াে নিকের পয়গাম পাঠাতে লাগল। মনিরা তাদেরকে দৃঢ়ভাবে জানাল, সে নিকে করবে না। কিন্তু তারা লােভ সামলাতে না পেরে বারে বারে পয়গাম পাঠাতে লাগল। রাজি না হলে অনেকে জানের হুমকি পর্যন্ত দিতে লাগল। শেষে মনিরা বাধ্য হয়ে আব্বাকে জানিয়ে এর বিহিত করতে বলল। ওসমানের আগের মতাে গায়ে ক্ষমতা নেই। ছেলে চলে যাবার পর তার স্বাস্থ্য ভেঙ্গে পড়েছে। জামাইয়ের গ্রামের লােকদের সঙ্গে গোলমাল না করে সেখানকার সব সম্পত্তি সস্তায় বিক্রি করে দিয়ে মেয়ে ও নাতনিকে নিজের বাড়িতে নিয়ে এল। নাতনির লেখাপড়ার জিদ দেখে তাকে এখানকার স্কুলে ভর্তি করে দিল। ওসমান মেয়ের আবার বিয়ে দিতে চাইল। কিন্তু মনিরা কিছুতেই রাজি হল না। ঝর্ণা এস, এস, সিতে তিনটে লেটার নিয়ে ফাস্ট ডিডিশনে পাস করল। তারপর উলিপুর হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজ থেকে ভালভাবে আই.এ. পাস করে বাংলায় অনার্স নিয়ে ঢাকা ভার্সিটিতে ভর্তি হল। সে রােকেয়া হলে থাকে। সাইফুলের একটা বছর নষ্ট হল। সে এস. এস. সি ও এইচ. এস. সি’তে প্রথম। স্থান অধিকার করে ইসলামিক হিস্ট্রীতে অনার্স নিয়ে ভার্সিটিতে ভর্তি হল। জালাল সাহেব ও তাহেরা বেগম কলেজে পড়ার সময় সাইফুলকে বার বার বুঝিয়েছেন, সে যেন কোনাে পার্টি না করে। কারণ জিজ্ঞেস করলে ছেলের কথা বলেছেন। আরজু যে ঘরে থাকত সেই ঘরেই সাইফুল থাকে। সেখানে আরজুর কয়েকটা বড় বড় ফটো দেয়ালে টাঙ্গানাে রয়েছে। সেগুলােতে আরজুর কুংফু প্রাকটিস করার ছবি। তাই দেখে সাইফুল একদিন জালাল সাহেবকে ও তাহেরা বেগমকে বলল, আমি কুংফু শিখব। জালাল সাহেব বলেন, আজকাল এসব শিখে রাখা ভালাে। দেশের যা অবস্থা, রাস্তাঘাটে যখন তখন খুন, জখম, হাইজ্যাক লেগেই আছে। তবে তুমি যদি প্রতিজ্ঞা কর, ঐসব শিখে সাধারণ মানুষের কোনাে ক্ষতি করবে না, তা হলে আমরা আপত্তি করব না। সাইফুল তৎক্ষণাৎ প্রতিজ্ঞা করল। তারপর কুংফু ক্লাবে ভর্তি হয়ে লেখাপড়ার সাথে সাথে কুংফু প্রাকটিস করতে লাগল । শেষে সে এত পারদর্শিতা লাভ করল যে, দু’বছরের মধ্যে কংফু মাস্টার খেতাব অর্জন করল। এখন সে ঐ ক্লাবে প্রশিক্ষকের কাজও করে। জালাল সাহেবের কাছে আশ্রয় পাওয়ার দেড় বছর পর সাইফুল একেবারে এস.এস.সির রেজাল্ট নিয়ে নিজেদের গ্রামে যায় । আব্বা, আম্মা ও বুবুকে সালাম করে তাদের দোয়া নেয়। বােনাইয়ের মৃত্যুর খবর জেনে বুবুকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলেছিল, তােমার কোনাে চিন্তা নেই। আল্লাহ আমাকে যত দিন বাঁচিয়ে রাখবেন ততদিন তােমার কোনাে কষ্ট হতে দেব না। তারপর থেকে সে প্রথমে নিজের হাত খরচের টাকা বাঁচিয়ে স্টাইফেনের টাকাসহ প্রতি মাসে আব্বাকে কিছু কিছু পাঠিয়েছে। তারপর কুংফু মাস্টার হওয়ার পর সেখান থেকে যা পায় সেটাও হাত খরচের বাচান টাকার সঙ্গে আব্বাকে পাঠায়। মাঝে মাঝে দেশে গিয়ে ঝর্ণার খোঁজ-খবর নেয়। সাইফুল যখন ভার্সিটিতে ভর্তি হল তখন ঝর্ণার অনর্সের সেকেণ্ড ইয়ার চলেছে। সে আগেই ঝর্ণার ভার্সিটিতে পড়ার খবর জেনেছে। এ্যাডমিশন নেয়ার পর দূর থেকে তাকে লক্ষ্য করে। কোনাে দিন কাছে গিয়ে কথা বলার চেষ্টা করে নি। একদিন লাইব্রেরীতে একটা বই নিতে গিয়ে লাইব্রেরীর বারান্দায় তার সঙ্গে মুখােমুখি দেখা। ঝর্ণা তখন একটা ছেলের সঙ্গে হেসে হেসে কথা বলতে বলতে লাইব্রেরী থেকে বেরােচ্ছে!

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

Love Story..পাট-১০

প্রেম কাহিনী (Samrat)পাঠ-১