প্রেম কাহিনী-পাঠ-৫

 ফকিরের কথা শুনে সাইফুল হা করে তার দিকে চেয়ে রইল। 

চেয়ে থাকতে থাকতে এক সময় তার মনে হল, ফকিরকে আর দেখতে পাচ্ছে না। দু'হাতে চোখ রগড়ে চারপাশে তাকিয়ে খুব অবাক হয়ে গেল। কোথাও ফকিরটা নেই। ভাবল, তা হলে কি সে এতক্ষণ স্বপ্ন দেখেছিল? আংটির কথা মনে পড়তে হাতটা তুলে দেখল, আংটিটা আঙ্গুলে রয়েছে। আল্লাহর নাম স্মরণ করে রিক্সায় উঠে গ্যারেজে ফিরে এল। সকালে মালিককে গত রাতে শুধু টাকা খােয়া যাওয়ার ঘটনাটা বলল ।


মালিক বললেন, ভালাে-মন্দ দেখে প্যাসেঞ্জার তুলতে হয়। সেই ঘটনার দিন পনের পর একদিন একটা প্যাসেঞ্জার নিয়ে মতিঝিল এল।

প্যাসেঞ্জার নামিয়ে গ্রীনলেজ ব্যাংকের সামনে দিয়ে আসার সময় একজন ভদ্রলােক রিক্সায় উঠে পুরানা পল্টনে যেতে বললেন। ঠিকানা মতে পৌছে দিয়ে বেশ কিছু দূর ফিরে আসার পর রিক্সার পাদানিতে কিছু পড়ার শব্দ পেয়ে পিছন ফিরে দেখল, একটা মাঝারি সাইজের চামড়ার ব্যাগ রিক্সার পাদানিতে পড়ে রয়েছে। রিক্সা থেকে নেমে

সাইফুল ব্যাগটা হাতে নিয়ে বুঝতে পারল, ব্যাগটা বেশ ভারি। চেন টেনে খুলে অবাক হয়ে গেল। ব্যাগটা পাঁচশাে টাকার নােটে ভর্তি । তাড়াতাড়ি বন্ধ করে এদিক-ওদিক তাকিয়ে সেটা গদীর নিচে রেখে সেই ভদ্রলােকের বাসায় ফিরে চলল।


এদিকে ভদ্রলােক টাকার ব্যাগের কথা ভুলে গেছেন। অসুস্থ স্ত্রীকে রেখে তিনি অফিসে গিয়েছিলেন। দুপুরে বাসায় খেতে আসার সময় স্টাফদের বেতন দেবেন বলে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে রিক্সায় করে এসেছেন। খাওয়া-দাওয়া করে স্ত্রীর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে অফিসে বেরােবার সময় টাকার ব্যাগের কথা মনে পড়ল। টাকার ব্যাগ না।

পেয়ে হতাশ হয়ে বসে ভাবলেন, নিশ্চয় রিক্সায় রয়ে গেছে। গাড়ি থাকলে এরকম হত । ভুলে গেলেও ব্যাগটা গাড়িতেই থাকত। এরকম কয়েকবার হয়েছে। গাড়িটা ট্রাবল দিচ্ছিল বলে ওয়ার্কশপে দিয়েছেন। এমন সময় দারােয়ান এসে বলল, একটা রিক্সাওয়ালা আপনার সঙ্গে দেখা করতে চাচ্ছে।


ভদ্রলােক একটা কোম্পানীর মালিক। নাম জালাল সাহেব। দারােয়ানর কথা শুনে জালাল সাহেব চমকে উঠে বললেন, তাকে ভিতরে নিয়ে এস।

সাইফুল ব্যাগটা গামছা দিয়ে জড়িয়ে নিয়ে দারােয়ানের সঙ্গে ভিতরে এসে ভদ্রলােককে চিনতে পারল। দারােয়ান চলে যাওয়ার পর গামছা খুলে ব্যাগটা টেবিলের উপর রেখে বলল, আপনি ব্যাগটা আমার রিক্সায় ফেলে এসেছেন।

জালাল সাহেব অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, ব্যাগে কি আছে দেখেছ? সাইফুল বলল, জি, দেখেছি সব পাঁচশাে টাকার নােট।

জালাল সাহেব আরাে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, জেনে শুনে এটা ফেরৎ দিতে এলে কেন? নিয়ে চলে যেতে পারতে?

সাইফুল জ্বীব কেটে বলল, কি বলছেন সাহেব? আপনার টাকা আমি নেব কেন?

সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে এখন আমি রিক্সাওয়ালা। তাই বলে বেইমানি করব? তা ছাড়া কোনাে মুসলমানের কি তা করা উচিত? কাল হাশরের ময়দানে আল্লাহপাকের কাছে মুখ দেখাব কি করে? আমার আব্বা-আম্মা আমাকে বেইমানি করার শিক্ষা দেয় নি।


জালাল সাহেব বুঝতে পারলেন, নিশ্চয় ছেলেটা বুনিয়াদি ঘরের । কিছু লেখাপড়াও জানে। তিনি ছেলেটার দিকে ভালাে করে লক্ষ্য করতেই নিজের ছেলে আরজুর কথা মনে পড়ল। আরজু তার একমাত্র ছেলে ছিল। কলেজে পড়তে পড়তে কুংফু শিখত।

কলেজে ইলেকশনের সময় বিপক্ষ পার্টির ছেলেদের ছুরির আঘাতে মারা যায়। তারপর থেকে ওঁর স্ত্রী তাহেরা বেগম অসুস্থ। সাইফুলের মধ্যে তিনি নিজের ছেলের প্রতিচ্ছবি দেখতে পেলেন। বললেন, বস, কিছু খেয়ে যাও।


সাইফুল বলল, না সাহেব, আমার দেরি হয়ে যাবে। টাকাগুলাে ঠিক আছে কিনা দেখে।

নিন । কি আছে দেখার জন্যে আমি একবার মাত্র খুলে টাকা দেখে বন্ধ করে ফেলেছি। জালাল সাহেব বললেন, আমি তা বুঝতে পেরেছি। তারপর তিনি ব্যাগ থেকে দুটো পাঁচশাে টাকার নােট বের করে তাকে দিয়ে বললেন, এটা তােমার সততার পুরস্কার।

সাইফুল বলল, মাফ করবেন, আমি টাকা নিতে পারব না।

জালাল সাহেব খুব আশ্চর্য হয়ে বললেন, নেবে না কেন? তুমি আমার এত বড় উপকার করলে, আর আমি তার প্রতিদান দেব না?

সাইফুল বলল, আপনি যদি সত্যি আমাকে কিছু দিতে চান, তা হলে একটা চাকরি দিতে পারেন। এবার যাই, বেশি দেরি হলে আমার রিক্সা চুরি হয়ে যাবে।


জালাল সাহেব একটা ভিজিটিং কার্ড তার হাতে দিয়ে বললেন, তুমি রিক্সাটা জমা দিয়ে এই ঠিকানায় আজই আমার সঙ্গে দেখা কর। দেখি, তােমাকে একটা চাকরি দেয়া যায় কিনা। সাইফুল আনন্দে হাত তুলে সালাম দিয়ে রিক্সা জমা দিতে চলে গেল ।

জালাল সাহেব স্ত্রীর রুমে গিয়ে টাকার ঘটনাটা বলে বললেন, ছেলেটা কুব সৎ ও ধার্মিক। ব্যাগে এত টাকা আছে জেনেও ফেরৎ দিয়ে গেল। তাকে এক হাজার টাকা পুরস্কার দিতে গেলাম, তাও লি না। ছেলেটাকে দেখে আমাদের আরজুর কথা মনে পড়ল। মনে হল, এতদিন পরে যেন আরজু ফিরে এল। ছেলেটা একটা চাকরি চায় ।


তাকে অফিসে আসতে বলেছি। এলে আমাদের কাছে রেখে দেব ভাবছি। তাহেরা বেগম বললেন, ছেরেটাকে দেখতে আমার খুব ইচ্ছা করছে। যদি আসে, তা হলে বাসায় নিয়ে এস।

সাইফুল রিক্সা জমা দিয়ে মতিঝিলে জালাল সাহেবের অফিসে এল। তখন অফিসের ছুটির সময়। জালাল সাহেব তাকে সঙ্গে করে বাসায় নিয়ে এলেন। ড্রইং রুমে বসিয়ে স্ত্রীর কাছে গিয়ে বললেন, ছেলেটা এসেছে, চল দেখবে।

ছেলের মৃত্যু সংবাদ পাওয়ার পর উনি অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলেন। পরে জ্ঞান ফিরলেও এক সাইড প্যারালাইজড হয়ে যায়। হাঁটা চলা করতে পারেন না। হুইল চেয়ার ব্যবহার করেন। জালাল সাহেব নিজেই হুইল চেয়ার ঠেলে স্ত্রীকে ড্রইংরুমে নিয়ে এলেন।

তাহেরা বেগম সাইফুলকে প্রশ্ন করে তার পরিচয় এবং ঢাকায় এসে রিক্সা চালাবার কারণ জানতে চাইলেন।


সাইফুল ঝর্ণার ব্যাপার ছাড়া সব কিছু বলল।

তাহেরা বেগম বেশ কিছুক্ষণ তার দিকে চেয়ে থেকে স্বামীকে বললেন, ও এখন ছেলে মানুষ, কি চাকরি করবে? তা ছাড়া পড়াশােনা করার জন্য চাকরি করতে চায়। কিন্তু চাকরি


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

Love Story..পাট-১০

প্রেম কাহিনী (Samrat)পাঠ-১